Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কলা, সবজি ও ভার্মিকম্পোস্টের সমন্বিত খামারের মাধ্যমে কৃষকের আর্থিক লাভ

কলা, সবজি ও ভার্মিকম্পোস্টের সমন্বিত
খামারের মাধ্যমে কৃষকের আর্থিক লাভ
ড. মো: আজিজুল হক১ কামরুন নাহার২
জৈবসার হিসেবে ভার্মিকম্পোস্ট বেশ উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও জৈব পদার্থের উৎস অপ্রতুল হওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়। আমাদের দেশের কৃষকরা সাধারণত ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাঁচামাল হিসেবে গোবর ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু অনেক সময় গোবরের স্বল্পতার কারণে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির কাজ বিঘিœত হয়। এ জন্য গোবরের পাশাপাশি বিকল্প জৈব পদার্থ ব্যবহার করতে হবে যাতে কম গোবর ব্যবহার করেও ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করা যায়। এ কাজে গোবরের সাথে কলা গাছ ব্যবহার করে গোবর সাশ্রয় করে ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করা যেতে পারে। ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতে কলাগাছ সংগ্রহের জন্য একটি উপযুক্ত জাতের কলা বাগান স্থাপন করতে হবে এবং তার সাথে আন্তঃফসল হিসেবে সবজি উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। প্রধান ফসল হিসেবে  কলা বাগান স্থাপন, আন্তঃফসল হিসেবে সবজি চাষ ও কলাগাছ ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোষ্ট তৈরির সমন্বিত পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান করা হলো-
কলা বাগান স্থাপন
কলার চারা ৩ মৌসুমে রোপণ করা যায়,  ১ম রোপণ : আশ্বিন- কার্তিক (মধ্য সেপ্টেম্বর-মধ্য নভেম্বর), ২য় রোপণ : মাঘ-ফাল্গুন (মধ্য জানুয়ারি-মধ্য মার্চ) এবং  ৩য় রোপণ : চৈত্র-বৈশাখ (মধ্য মার্চ-মধ্য মে) মাসে করা যায়। যেসব কলার জাত দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং একই গাছকে গোড়া থেকে বার বার কর্তন করলেও পুনরায় দ্রুত গাছ জন্মায় এমন জাত নির্বাচন করতে হবে। চাষ-মই ও সার প্রয়োগ করে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে সারিতে (সারি-সারি ৪ মিটার এবং গাছ-গাছ ৪ মিটার দূরত্ব) ৩০-৪০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। ২ফুটদ্ধ২ফুট আকারের গর্ত করে চারা লাগানো যেতে পারে। প্রতি গর্তে ইউরিয়া ৫০০-৬৫০ গ্রাম, টিএসপি ২৫০-৪০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০-৩০০ গ্রাম, ভার্মিকম্পোস্ট ৪-৫ কেজি প্রয়োগ করা যেতে পারে। কলা বাগানে আন্তঃফসল হিসেবে সবজি চাষ করা হবে বিধায় কলার রোপণ দূরত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি দিতে হয়। আন্তঃফসল হিসেবে বছরব্যাপী মৌসুমভিত্তিক সবজি উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত সবজি জাত নির্বাচন করতে হবে। আন্তঃফসল আবাদকালীন বিশেষ করে রবি মৌসুমে কলাগাছের ছায়া যাতে কম পড়ে এ জন্য কলার পাতা উপরের দিকে ৩টি রেখে বাকিগুলো ছাঁটাই করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) ময়মনসিংহ অঞ্চলের সহজলভ্য স্থানীয় গেরা বা গেরা সুন্দরী কলার বাগান স্থাপন করা হয় (বাগানটির আয়তন : ৪০দ্ধ১৫ ব.মি বা ১৫ শতাংশ) এবং এতে আন্তঃফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়। কলা বাগানে আন্তঃফসল হিসেবে প্রথম বছর জায়ান্ট লজ্জাবতী এবং সবজি হিসেবে পাটশাক চাষ করা হয়। মাটির উর্বতা বৃদ্ধির জন্য জায়ান্ট লজ্জাবতীর চাষ করা হয় এবং ৩-৪বার  জায়ান্ট লজ্জাবতী কর্তন বা সংগ্রহ করে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় বছর পর্যায়ক্রমে মৌসুমভিত্তিক মুলা, লালশাক, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, টমেটো, বেগুন, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, ডাটা ইত্যাদি চাষ করা হয়। রোপণের একবছর পর থেকেই পরিপক্ব কলা সংগ্রহ করা হয় এবং কলা সংগ্রহের পরে কলাগাছ ভার্মিকম্পোষ্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও কলার ছোপ বা ঝাড়ের পার্শ্ব থেকে গজানো চারা বা পোয়াসমূহ ৫-৬ফুট লম্বা হলেই তা মাটি থেকে ৪-৫ ইঞ্চি উপর থেকে কেটে ভার্মিকম্পোষ্ট তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। কর্তনকৃত গাছ থেকে পুনরায় কলাগাছ জন্মায় যা আবার ২-৩ মাস পরেই কর্তন করা হয় (একই কলা গাছ ৪-৫ বার কর্তন করলেও পুনরায় সেখান থেকে কলাগাছ জন্মায়)। এভাবে প্রচুর পরিমাণে কলাগাছের বায়োমাস সংগ্রহ করা হয় (১৫ শতাংশ জমি থেকে প্রতি বছর প্রায় ( ১২-১৩ টন) এবং তা ভার্মিকম্পোষ্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তবে কলার ছোপ বা ঝাড়ে পর্যায়ক্রমে ছোট, মাঝারি, বড় এ তিন ধরনের ৩টি কলা গাছ সব সময় রেখে বাকিগুলো উপরের নিয়মে কাটা হয়। এভাবে কলাবাগান থেকে পরিপক্ব কলা, কলাগাছ ও আন্তঃফসল হিসেবে সবজি সংগ্রহ করা হয় এবং উৎপাদিত কলা গাছ ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করা হয়।
কলা গাছ ও গোবর দিয়ে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতি
সারা বিশ্বে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করা হয়। খরচ, জিনিসপত্রের সহজলভ্যতা, উদ্দেশ্য, উৎপাদনের পরিমাণ, বিরাজমান পরিবেশ প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে ভার্মিকম্পোস্টিং পদ্ধতি নির্বাচন করা হয়। সিমেন্টের রিং (উচ্চতা ১ হতে ২ ফুট এবং ব্যাস ২.৫ হতে ৩ ফুট), সিমেন্টের চারি (উচ্চতা ১.৫ ফুট এবং ব্যাস বা চওড়া ২.৫ ফুট), ইটের স্থায়ী ট্যাংক/বক্স/আয়তকার চৌবাচ্চা (২.৫ ফুট উচ্চতা ও ২.৫ ফুট প্রস্থ এবং প্রয়োজনমাফিক দীর্ঘ) এবং প্লাস্টিকের ট্যাংক/ড্রাম/ট্রে প্রভৃতি হাউজ হিসেবে ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করা যায়। ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনের মাত্রার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন আকারের ঘর বা শেড সহজ লভ্য জিনিসপত্র যেমন-টিন, বাঁশ, কাঠ প্রভৃতির সমন্বয়ে নির্মাণ করা যায় যাতে ভার্মিকম্পোস্ট বেড বা হাউজ রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়। তবে যেভাবেই ঘর বা শেড নির্মাণ করা হোক না কেন তাতে যেন ছায়াযুক্ত শীতল পরিবেশ থাকে। এ জন্য গাছের ছায়াযুক্ত স্থান নির্বাচন করা যেতে পারে। অসংখ্য জৈব পদার্থ ও তাদের মিশ্রণ হাউজসমূহে ভরাট করে ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করা যায়। এখানে কলাগাছ ও গোবর স্তরে স্তরে স্থাপন করে হাউজ ভরাট করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করার প্রক্রিয়া টেবিল-২ দ্রষ্টব্য।
টেবিল-২ : ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতে গোবর ও কলাগাছের স্তর
এভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্তর মোট ২.৫- ৩ ফুট পর্যন্ত উঁচু করে (অর্থাৎ মোট স্তর ১৫-১৮টি) অথবা হাউজের উচ্চতা অনুযায়ী ভরাট করতে হবে। তবে সবার উপরের স্তর অবশ্যই গোবর দিয়ে শেষ করতে হবে।
৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত গাদা ঢেকে রাখতে হবে এবং মাঝে মধ্যে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এ সময় বেশ তাপ তৈরি হয়। এ জন্য এ ধাপে মাদায় কেঁচো ছাড়া যাবে না।
অত:পর কম্পোষ্ট গাদা ওলট-পালট করে উপরে সমান করে পুণরায় ১-১.৫ ইঞ্চি পুরু গোবর দিয়ে প্রতি ৪ বর্গফুটে টি-২৫০-৩০০টি কেঁচো ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে ওলট-পালট না করেও সরাসরি গাদাতে কেঁচো প্রয়োগ করা যায়। যখন কোন রকম দুর্গন্ধ থাকে না এবং জৈব পদার্থ কালো-বাদামি বর্ণের ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে ভার্মি কম্পোষ্ট সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে। চালুনি দ্বারা কেঁচো ও কম্পোস্ট পৃথক করা যেতে পারে। অপচনকৃত দ্রব্য পুনরায় গাদা করে অবশিষ্টাংশটাও ভার্মি কম্পোষ্টে পরিণত করতে হবে। এ ভাবে কলাগাছসহ অন্যান্য জৈব পদার্থ ও গোবরের মিশ্রণে কেঁচো প্রয়োগ করে ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরি করা যায়।
ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি কালীন আন্তঃপরিচর্চা
সুষ্ঠভাবে পরিচর্চার জন্য কিছু বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন : ১) পর্যাপ্ত ঠা-া/ছায়াযুক্ত শীতল স্থান বা পরিবেশ বজায় রাখা, ২) পর্যাপ্ত অন্ধকার ও বায়ুচলাচল অবস্থা বজায় রাখা। চটের ছালা হাউজের বা রিং বা চারি বা চৌবাচ্চার উপরে বিছিয়ে দিতে হবে। এ কাজে পলিথিন বা মোটা মেট ব্যবহার করা হলে যেন তা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত হয়। ৩) উপযুক্ত নিষ্কাশন অবস্থা বজায় রাখা, ৮) দুর্গন্ধ মুক্ত রাখা। তীব্র দূর্গন্ধ তৈরি হলে জৈব পদার্থ ওলট-পালট করে দেওয়া যেতে পারে, ৯)  আদর্শ তাপমাত্রা (২০-৩০ ডিগ্রি সে.) বজায় রাখা।
ভার্মি কম্পোস্টিং-এর জন্য ক্ষতিকর উপাদান সমূহ
ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির সময়কালীন ক্ষতিকর বিষয় সমূহ থেকে ভার্মি কম্পোস্টকে রক্ষা করে তৈরি প্রক্রিয়াকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। যেমন : ১) উচ্চ তাপমাত্রা/সরাসরি সূর্যের আলো, ২) অতিরিক্ত পানি/বৃষ্টির পানি জমে থাকা, ৩) বায়ু চলাচলহীন অবস্থা, ৪) হাঁস-মুরগি, পাখি, ইঁদুর, চীকা, সজারু, বেজী প্রভৃতি, ৫) পিঁপড়া বিশেষ করে লাল পিঁপড়া, সাদা ও লাল মাকড়/মাকড়াসা, কেঁল্লা, উরচুঙ্গা, তেলাপোকা, সাপ, ব্যাঙ প্রভৃতি, ৬) টক/এসিড তৈরি করে এমন দ্রব্য (যেমন-কাঁচা আনারসের ছোবরা, ফ্রেস কিচেন ওয়েস্ট) থেকে বিরত রাখা।
আয়, ব্যয় ও লাভ
গবেষণায় দেখা যায় ১৫ শতাংশ জমি থেকে কলা, সবজি ও ভার্মিকম্পোস্টের সমন্বিত খামারের মাধ্যমে ১ম বছর মোট আয় হয় ৩৯,২৭০/- টাকা এবং মোট ব্যয় বাদ দিয়ে নীট লাভ হয় ১১,৭২৫ টাকা এবং ২য় বছর মোট আয় বেড়ে হয় ১,৪৩,০২০ টাকা এবং মোট ব্যয় বাদ দিয়ে নীট লাভ হয় ৫৫,৯৪০ টাকা। সুতরাং কলা বাগান, আন্ত:ফসল হিসেবে সবজি চাষ ও ভার্মিকম্পোস্টের সমন্বিত খামার লাভজনক যা কৃষকের আয় ও পুষ্টি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
কলা ও সবজির সমন্বিত আবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত কলা গাছ ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করা হলে তা কলা ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসলে ব্যবহার করে রাসায়নিক সার সাশ্রয় করা যায়। এতে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা হয়, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, জৈব পদার্থের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, পরিবেশ উন্নত হয়, গ্রামীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় এবং সর্বোপরি কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
“জৈব পদার্থ যার ভার্মিকম্পোস্ট তার”

লেখক : সিএসও এবং এসও, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাকৃবি ক্যাম্পাস, ময়মনসিংহ। মোবাইল: ০১৭১৬৬২৭৩০৩; ই-মেইল : azizul_bina@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon